স্টাফ রিপোর্টারঃ
সুনামগঞ্জ শহরের পুরাতন বাসস্টেশন। গত ৪ আগস্ট। একটি নিছক ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিল রূপ নেয় এক বর্বর বিকেলবেলার বিভীষিকায়। গুলি, ককটেল, পেট্রলবোমা আর দেশীয় অস্ত্রের ঝলকে মুহূর্তেই যেন ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় মানুষের নিরাপত্তাবোধ। সেই ভয়াবহ ঘটনার বিচার চেয়ে এখন আদালতের দারস্থ হয়েছেন গুলিবিদ্ধ জহুর আহমদের ভাই হাফিজ আহমদ।
দ্রুত বিচার আইনে করা এই মামলায় উঠে এসেছে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক শক্তির এক বিস্তৃত চিত্র। যেখানে দেশের একজন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী থেকে শুরু করে থানার একজন এসআই পর্যন্ত রয়েছেন একই আসামির তালিকায়।
এই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন—সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তাঁর সঙ্গে আছেন আরেক সাবেক সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, যাঁর নাম ঘিরেই মূলত অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দু তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি নূরুল হুদা মুকুট এবং সাধারণ সম্পাদক নোমান বখত পলিনও রয়েছেন এই মামলার অন্যতম আসামি হিসেবে।
তালিকায় আরও আছেন কেন্দ্রীয় রাজনীতির প্রান্ত ছুঁয়ে থাকা নাম মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও রণজিত সরকার। রয়েছেন সুনামগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র নাদের বখত এবং সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে নাম এসেছে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রাজন কুমার দাস, সদর থানার ওসি খালেদ চৌধুরী এবং এসআই রিয়াজ আহমদের। অভিযোগ, তাঁদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা ছিল হামলা বাস্তবায়নে।
ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যেও তালিকা বেশ দীর্ঘ ও শক্তিশালী। সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি দীপংকর কান্তি দে এবং সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রিপন—দুইজনই মামলার প্রধান ছাত্রনেতা আসামি।এছাড়াও ছাত্রলীগ নেতা ফজলে রাব্বী স্মরণ, লিখন আহমদ, জিসান এনায়েত রেজা,তানিম মিয়া, তুষার,মোঃ পারভেজ হোসেন ফাহিম, সুহেল আহমদ, মোস্তাক আহমেদ । যুবলীগের কর্মী মঞ্জুর আহমদ খন্দকার, শংকর চন্দ্র দাস, রেজাউল আলম নিক্কু, আবুল কালাম, এহসান উজ্জ্বল, অমল কর, প্রদীপ রায়, রিগ্যান,সজীব রঞ্জন দাশ সল্টু, আপ্তাব উদ্দিন এঁদের সঙ্গে একে একে উঠে এসেছে আরও অনেকের নাম— কুদ্দুস ওরফে বেল কদ্দুস, ফরিদ আহমদ ইমন, সুয়েব আহমদ চৌধুরী, জুবের আহমদ অপু, আলামিন রহমান, আহসান জামিল আনাস, লুৎফুর রহমান লিটন, জহির আলী, রঞ্জিত চৌধুরী রাজন (ফতেহপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান), জনি হোসেন, হাসানুজ্জামান ইস্পাহানী, ফজলুল হক, ফরহাদ, সাজন আহমদ, আবিদুর রহমান তারেক, নীরব, মেহের, আনোয়ার মিয়া আনু এবং হাসনাত হোসাইন প্রমুখ।
এরা কেউ সরাসরি হামলায় অংশ নিয়েছেন, আবার কেউ কেউ ‘হুকুমদাতা’ হিসেবে মামলায় চিহ্নিত হয়েছেন।
এই মামলায় অভিযোগ তোলা হয়েছে, যে হামলাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত, যার পেছনে ছিল ক্ষমতার গন্ধ, দম্ভ এবং এক ধরনের ‘রাষ্ট্রীয় বর্বরতা’র অভিপ্রায়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আব্দুল হক ও মাসুক আলম বলেন, “গত ৪ আগস্টের ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থী, আইনজীবী ও জনসাধারণের ওপর যে নারকীয় হামলা চালানো হয়েছে, তা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অকল্পনীয়। গুলি, বোমা ও দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে একটি শান্তিপূর্ণ মিছিলে রক্তাক্ত হামলা চালানো হয়েছে। এই ঘটনায় এখনও বহু তরুণ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় পরিচালিত এমন ফ্যাসিস্ট আচরণের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতেই আমরা দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করেছি। আদালতের কাছে আমাদের প্রত্যাশা—তিনি ন্যায়বিচারের পথে প্রথম পদক্ষেপটি নেবেন।”