স্টাফ রিপোর্টার :
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর প্রকাশিত হওয়ার পরপরই উত্তাল হয়ে ওঠে সুনামগঞ্জ। শহরজুড়ে বিজয় মিছিলের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ ভাঙচুর চালায় সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুপুরে শহরে ছড়িয়ে পড়ে যে, “শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।” এই খবরে আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিস্ট আচরণে ক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় নেমে আসে। শুরু হয় আনন্দ মিছিল। মিছিল থেকে প্রথমে হামলা চালানো হয় সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে। সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি ও নেতাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়।
এরপর হামলা ও ভাঙচুরের লক্ষ্য হয় জেলা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এসপি অফিস, সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানা, চেম্বার অব কমার্স ভবন, জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ একে একে বিভিন্ন সরকারি অফিসে হামলা চালানো হয়। একইসাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মালিকানাধীন রেস্টুরেন্ট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল পর্যন্ত।
জানা যায়,জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল হুদা মুকুটের বাসায় আগুন লাগানো হয়, জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তার ব্যবহৃত গাড়ি। আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, রণজিত সরকারের সিলেট ও সুনামগঞ্জের বাসায় হামলা চালানো হয়। এ ছাড়া জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি দীপংকর কান্তি দে ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রিপনের বাসায়ও হামলা ও ভাঙচুর হয়।
যুবলীগ নেতা মঞ্জুর আহমদ খন্দকারের মালিকানাধীন আলকাস-আমিনা খন্দকার হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে জনতা। এরপর ১নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগ নেতা মো. পারভেজ হোসেন ফাহিম এবং প্রয়াত শিক্ষক মো:বশির আলীর বাসায়ও হামলা হয়।
এছাড়া হামলা হয় সাবেক জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও যুবলীগ নেতা ফজলে রাব্বী স্মরণ, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি লিখন আহমদ, ছাত্রলীগ নেতা নীরব, মেহের, তানিম মিয়া, আনোয়ার মিয়া আনু, হাসনাত হোসাইন, সুহেল আহমদ, মোস্তাক আহমেদ, জমিরুল ইসলাম পৌরব, তুষার, অয়ন, আওয়ামী লীগ নেতা মুসাহিদ, শিমন চৌধুরী, জিকির আলীর বাসায়ও।
যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। অনেকেই নিরাপত্তার অভাবে বাড়িঘর ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন বলে জানা গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,“আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে মানুষের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভ ও বঞ্চনা ছিল প্রবল। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবরে সেই ক্ষোভই রাস্তায় নেমে এসেছে। শাসকশ্রেণির প্রতি মানুষের ক্ষোভ যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন তা সহিংস রূপ নেয়।”
অন্যদিকে,
“এটি শুধু একটি সরকারের পতন নয়; রাষ্ট্রক্ষমতার একচেটিয়া দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে জনতার জমে থাকা প্রতিক্রিয়া। তবে এমন সহিংসতার পরিবর্তে সুসংগঠিত গণতান্ত্রিক রূপের প্রয়োজন ছিল, যা দেশের জন্য ইতিবাচক ও টেকসই হতো।”
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার এন এম মোর্শেদ জানান,
“সরকার পতনের পর পুলিশের উপরেও হামলা হয়েছে। আমরা হামলা ও ভাঙচুর বন্ধের জন্য কাজ করছি। খুব দ্রুত সমাধান হবে এবং যারা এই হামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর যারা ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”