শিরোনাম:
সুনামগঞ্জ সীমান্তে ভুয়া পুলিশ আটক “বিচারের নামে অবিচার হয়, নারী কোথাও নিরাপদ নয়”শরী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ বিদবস-২০২৪ অনুষ্ঠিত তাহিরপুরের পাতারগাঁও অবৈধ বাঁধ দিয়ে পানি আটকিয়ে চাদাঁ নেয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন শাল্লায় জুলাই-আগস্টে শহীদদের স্মরণে স্মরণ সভা। আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার জড়িতদের দ্রুত দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি বিক্ষোভ মিছিল তাহিরপুরের লাউড়েরগড় সীমান্তে সাড়ে ১৪ লাখ টাকার ভারতীয় চিনি ও আনার আটক আমরা ছাত্রদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপে নিতে বা কঠোর হতে চাই না, আমাদের সন্তান,কারো ভাই,কারো বোন,,,স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা “বিগত ১৫ বছরে ৬ শতাধিক নেতাকর্মী গুম হয়েছে”- কলিমউদ্দিন আহমেদ মিলন রাষ্ট্র মেরামতে তারেক রহমানের ৩১ দফা-শাল্লায় শিক্ষার্থীদের সাথে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের মতবিনিময়।  দোয়ারাবাজার সীমান্তে ৫২ বস্তা চোরাই চিনিসহ আটক ২

বিএনপি ছাড়া কি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব?

বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হতে পারে, সে জন্য যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহ প্রকাশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকার ও সরকার প্রধান শেখ হাসিনার উপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে চলেছে বিগত কয়েক মাস ধরে। শেখ হাসিনা ও আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে প্রকাশ্যে নানা বক্তব্য দিয়েছেন। যা দুই দেশের সম্পর্ককে বৈরী করে তুলেছিল বলেই ধারণা। বিশেষ করে বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস দৃষ্টিকটুভাবেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করেছেন, এবং একটি ধারণা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, আর যাই ঘটুক আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া অনুষ্ঠিত হবে না।

বিএনপিও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সেই অবস্থানের জানান দিচ্ছিল। যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই বারবার বলে আসছে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সবার জন্য অংশগ্রহণমূলক হোক। এই নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র কিছুদিন আগে বাংলাদেশের জন্য তাদের নতুন ভিসানীতিও ঘোষণা করে। বাংলাদেশের নির্বাচন কেন্দ্র করে এখনও তারা যথেষ্ট সক্রিয়ও। বাংলাদেশের নির্বাচন শুধু আমেরিকা নয়, ভারত এবং চীনের অবস্থান নিয়েও একটি বড় বিষয় সেখানে ভারত এবং চীন বাংলাদেশের নির্বাচনে তাদের ভূমিকা নিয়ে গত সপ্তাহে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয়তা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে বলে ভারতের আশঙ্কা। ভারত মনে করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে মৌলবাদী শক্তি মাথাচাড়া দেবে। দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাবও মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে যাবে, যা ভারতের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই ব্যাখ্যা ভারত আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে নানাভাবে জানিয়েছে।

বাংলাদেশের জনগণই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবেন। বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ভারত। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি ভারত শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশকে স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধিশালী করে তুলতে সে দেশের দৃষ্টিভঙ্গিকে ভারত বরাবর সমর্থন করে আসছে। সেই সমর্থন অব্যাহত থাকবে। চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনও গত সপ্তাহে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বিআরআইয়ের ১০ বছর: পরবর্তী সোনালি দশকের সূচনা’ শীর্ষক সেমিনারে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ‘বাংলাদেশের সংবিধান মেনে চলার’ ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন দেখতে চায় চীন।

সর্বশেষ স্থানীয় সময় মঙ্গলবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক প্রশ্নকারী বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানতে চান। তিনি প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সহিংসতার পথ বেছে নেওয়ায় তা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ণ করতে ভূমিকা রাখছে বলে কি আপনি মনে করেন? জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমরা বাংলাদেশে একটি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চাই। আমরা এমন নির্বাচন দেখতে চাই যেটি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে। এটাই আমাদের নীতি এবং এই বিষয়টি আমি এখান থেকে বেশ কয়েকবার স্পষ্ট করে বলেছি। পরে ওই প্রশ্নকারী জানতে চান, আপনি কি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকারের প্রেক্ষাপটে বিএনপির সংগঠিত রাজনৈতিক সহিংসতার নিন্দা করবেন? জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র বলেন, আমি মনে করি, আমি আমার আগের জবাবেই এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছি। এর পরে আসলে বাংলাদেশের নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করা না করার চেয়ে অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচনের প্রশ্নটি এখন সবচেয়ে বড় বিষয়।

সংবিধানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। সব কিছু স্বাভাবিক নিয়মে চললে আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আইনত কোন বাধা নাই। সরকারি দল হিসাবে আওয়ামী লীগ পুরোদমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। কিন্তু সবকিছুর মাঝেও দেশে-বিদেশে সাধারণ মানুষ কূটনৈতিক মহল সব জায়গায় আলোচনার মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বিএনপি ছাড়া এই নির্বাচন আদৌ সম্ভব কী না, সম্ভব হলে সেই নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কী না? আমেরিকার মত দেশের আগ্রাসী অবস্থান সেই ভীতি কাজ করছে জনমনে।

এখন অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন মানে কী শুধুই বিএনপির অংশগ্রহণ, না বেশি সংখ্যক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ সেটিও একটি প্রশ্ন। গত সপ্তাহে নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার পর দেশের নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১৭টি দল এই তফসিলকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। এবং তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে ১৫টি দল। যার মধ্যে বিএনপি ছাড়া বাকি সব দলই আসলে নাম সর্বস্ব রাজনৈতিক দল। তৃতীয় বৃহৎ রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি সে সময় নির্বাচনের পক্ষে বিপক্ষে তেমন কিছুই বলে নাই। কিন্তু আজকে জাতীয় পার্টি এবং যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে অংশ গ্রহণের ঘোষণার মধ্য দিয়ে অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচনের পথ সুগম করে দিয়েছে। যুক্তফ্রন্টের আজকের অনুষ্ঠানে সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, যুক্তফ্রন্ট আগামী নির্বাচনে ১০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি আছে। নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়ার তারিখ ৩০ নভেম্বর থেকে পেছানো হতে পারে। নির্বাচনের ভোটগ্রহণসহ অন্যান্য তারিখও পেছানো হতে পারে।

কল্যাণ পার্টির সঙ্গে নতুন গঠিত যুক্তফ্রন্টে আছে জাতীয় পার্টি (মতিন), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেয়ে হঠাৎ আলোচনায় আসা তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়া কথা বলছে। অন্যদিকে, বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ১২৫ জন নেতা স্বতন্ত্র গণতন্ত্র মঞ্চের ব্যানারে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। বিএনপি দলগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিলেও তারা স্বতন্ত্র গণতন্ত্র মঞ্চের ব্যানারে ১২৫ জন বিএনপি নেতা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

নির্বাচনের একেবারে দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে এখন বাংলাদেশ। বিএনপির আন্দোলন সংগ্রাম , হরতাল অবরোধ কিংবা জ্বালাও পোড়াও নীতিতে নির্বাচন বানচাল এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি, শেখ হাসিনার পদত্যাগ কিছুই অর্জন করা সম্ভব হয়নি। বিএনপির সামনে এখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা ছাড়া আসলে আর কোন পথ খোলা নেই। কারণ ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে ও বিএনপি ব্যর্থ হয়েছিল তাই একই ব্যর্থতা নিয়ে আবার ও রাজপথের আন্দোলন দিয়ে সফলতা আশা করা কতোটা যুক্তিযুক্ত তা বিএনপির নেতৃত্বই ভাল বলতে পারবেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীর চেয়ে বরং বিএনপি যদি খালেদা জিয়ার মুক্তি কিংবা তারেক জিয়ার নিরাপদ বাংলাদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে আন্দোলন করত সেটি বরং তাদেরকে ব্যাপকভাবে জনসম্পৃক্ত করার সুযোগ ছিল। পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্যের প্রতি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আবেগ জড়িত। দেশের সাধারণ জনগণের বৃহৎ একটি অংশ জিয়া পরিবারের প্রতি এখনো তাদের আবেগ ধারণ করেন। সেই সব সাধারণ মানুষকে বিএনপি তাদের সাথে বিগত ১৫ বছরেও সম্পৃক্ত করতে পারেনি। বরং আওয়ামী লীগের সাথে এক অসম যুদ্ধে লিপ্ত থেকেছে, যে যুদ্ধে তাদের প্রধান সেনাপতিই অনুপস্থিত।

অবিশ্বাস ও নেতৃত্বহীনতা দিয়ে কোন যুদ্ধেই জয়লাভ করা সম্ভব নয়। বিএনপির ক্ষেত্রে দুইটাই আছে। নির্বাচন কমিশন বলেছে বিএনপি যদি এখনও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে, তাহলে নির্বাচন কমিশন সেই সুযোগ তৈরি করে দেবে। নতুন করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচনের দিনক্ষণ পরিবর্তন করবে। বিএনপিকে বেঁচে থাকতে হলে এবারের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা ছাড়া বিকল্প আছে বলে মনে হয় না।

বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে দলটির স্থানীয় নেতারাই বিভিন্ন দলের হয়ে স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবেন, আর এতে করে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টি এবং স্বতন্ত্র বা বিভিন্ন জোটের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলক একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেটি এখন নিশ্চিত প্রায়।

খেলা হবে, কিন্তু বিএনপি মাঠে নয় দর্শক গ্যালারিতে বসে থাকবে।