প্রতিনিধি তাহিরপুরঃ
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার হলহলিয়া গ্রামে টাকার লেনদেনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আহত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের নাম সোনা মিয়া (৭৮)। তিনি দীর্ঘ ২২ দিন সিলেটের এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত সোমবার (১৩ অক্টোবর) ভোর ৫টায় মৃত্যুবরণ করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে। স্থানীয় যুবক নজির হোসেন ১,৫০০ টাকা পাওনা নিয়ে বাদী মো. আব্দুল হামিদের ভাই আব্দুর রহমানের সঙ্গে বাদীর বাড়িতে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে নজির হোসেন ক্ষোভে চলে যান এবং হুমকি দেন “সময় পেলে টাকার স্বাদ বুঝিয়ে দেবেন।”
এরপর পরদিন (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে একতা বাজার এলাকায় নজিরসহ কয়েকজন আব্দুর রহমানের ওপর হামলা চালান। সকাল ১০টার দিকে নজিরের নেতৃত্বে প্রায় ১৫-১৬ জন সংঘবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র—রামদা, দা, লোহার রড, কাঠের রোল ও বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে আব্দুল হামিদের বসতবাড়িতে হামলা চালান।
হামলার সময় বৃদ্ধ সোনা মিয়া প্রতিবাদ জানালে হামলাকারীরা তাকে লক্ষ্য করে ধারালো রামদা দিয়ে আঘাত করে মাথায় মারাত্মক জখম করে। পরে লোহার রড ও কাঠের রোল দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করা হয়। হামলায় আব্দুর রহমান, কুদরত আলী, রহম আলী, চান্দু মিয়া, শাপলা বেগম ও সালাউদ্দিনসহ অন্তত সাতজন আহত হন।
এ সময় হামলাকারীরা বসতবাড়ির দরজা-জানালা ও আসবাবপত্র ভেঙে প্রায় এক লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন করে বলে অভিযোগে উল্লেখ আছে।
স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক গুরুতর আহতদের সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল এবং পরে ওসমানী মেডিকেলে পাঠান। সেখানে ২২ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে সোনা মিয়া শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেন।
এ ঘটনায় নিহতের ছেলে মো. আব্দুল হামিদ (৪০) বাদী হয়ে ১৭ জনের বিরুদ্ধে তাহিরপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে আসামি হিসেবে মো. হোসেন আলী, আমির আলী, হাছেন আলী, শফিকুল ইসলাম, সাইকুল ইসলাম, আল আমিন, শাহ করিম, শাহ জাহান, নজির হোসেনসহ আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন,”ঘটনার অভিযোগটি আমরা পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অন্যদিকে, অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে একাধিক আসামীর মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।পরে আসামিপক্ষের শাহ জাহানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করার পর তিনি বলেন,অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ১৫০০ টাকা পাওনা নিয়ে নজিরের সঙ্গে আব্দুর রহমানের বাকবিতণ্ডা হয় এবং এক পর্যায়ে আব্দুর রহমান তাকে লাথি মারে। শাহ আলম প্রতিবাদ করলে আব্দুর রহমান হুমকি দেয়। স্থানীয় গণ্যমান্যদের মধ্যস্থতায় বিষয়টি মীমাংসা হয়।তারপর নজিরের চাচাতো তিন ভাই আজিজুল, মাফিজুল ও সাইফুল কাজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় তখন আব্দুর রহমান তাদেরকে দেখে তার আত্মীয়স্বজন নিয়ে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে তিনজনের ওপর অতর্কিত ভাবে বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র দ্বারা হামলা চালায়। তারা তিন জনের হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না, বরং বাদী পক্ষের এক ব্যক্তি অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে গিয়ে সোনা মিয়ার মাথায় আঘাত করে বলে শাহজাহান দাবি করেন।
তবে নিহতের পরিবার এ দাবি অস্বীকার করে জানিয়েছে,পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। এখন তারা উল্টো মিথ্যা গল্প বানাচ্ছে।