শিরোনাম:
ফেক আইডি ফাঁসের জেরে অপপ্রচারের শিকার তরুণ উদ্যোক্তা জাদুকাটা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ ও অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের দাবি ইজারাদারদের তাহিরপুরে পাওনা টাকার জেরে সংঘর্ষে আহত বৃদ্ধের মৃত্যু, ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ সুনামগঞ্জের নদীর পাড়ে ময়লার স্তুপ: ঝুঁকিতে জলজ জীবন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ‘বাঁধ ভাঙলে বিলীন হবে প্রজন্ম’ধোপাজানের ভাঙনে হাহাকার ১৫ গ্রামজুড়ে অবৈধ বালু উত্তোলন রোধে যাদুকাটা নদীতে বাঁশের বেড়া স্থাপন, অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের দাবি ইজারাদারের সুনামগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী সাইবার দলের কমিটি ঘোষণা বিশ্ব বসতি দিবস ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে সুনামগঞ্জে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত পান্ডারখাল বাঁধে ইট-বালুর স্তুপ: হারাচ্ছে পর্যটন সম্ভাবনা ও পরিবেশ সুনামগঞ্জে সাংবাদিকের উপর হামলার মামলায় নতুন মোড় পুনরায় তদন্তে নেমেছেপিবিআই

সুনামগঞ্জের নদীর পাড়ে ময়লার স্তুপ: ঝুঁকিতে জলজ জীবন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

নিজেস্ব প্রতিবেদকঃ

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নদী ও খালের পাড় এখন যেন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। একসময় মানুষের হাঁটাচলার, নৌকাবাহিত জীবনের প্রাণকেন্দ্র এই নদীগুলো আজ ছড়িয়ে আছে প্লাস্টিক, পলিথিন ও গৃহস্থালির নোংরা আবর্জনায়। নদীর স্বচ্ছতা হারিয়ে গেছে, তীরগুলোতে জমে আছে দুর্গন্ধমাখা ময়লার স্তূপ। শুধু সৌন্দর্যই নষ্ট হয়নি এই বর্জ্য নদীর জলজ প্রাণী ও পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের বৈঠাখালি নৌকাঘাট থেকে শুরু করে দক্ষিণ বড়পাড়া, তেঘরিয়া, পুরানপাড়া, মড়লহাটি, সাহেববাড়ি ঘাট, উত্তর আরপিননগর, পশ্চিম বাজার, চাঁদনিঘাট, জগন্নাথবাড়ি, কাঁচাবাজার হয়ে নবীনগর পর্যন্ত নদীর তীর ময়লায় জর্জরিত। কোথাও ড্রেনের ময়লা সরাসরি নদীতে গিয়ে মিলছে, কোথাও নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে আবর্জনার ছোট ছোট স্তূপ।

বিশেষ করে সাহেববাড়ি ঘাট ও চাঁদনিঘাটে দৃশ্য এতটাই করুণ যে, শহরের নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন হারিয়ে গেছে ময়লার স্তূপের আড়ালে।দুর্ভাগ্যবশত, এই চিত্র শুধু শহরের মানুষের জন্য নয়। দেশের মধ্যে অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র টাঙ্গুয়ার হাওরে যাতায়াতের প্রধান নৌঘাট সাহেব বাড়ি ঘাটেও ময়লার স্তূপ দেখা গেছে। প্রতিদিন দেশ-বিদেশ থেকে শত শত পর্যটক এই ঘাট ব্যবহার করেন। তাদের চোখে পড়ে নদীর পাড়ে ছড়িয়ে থাকা নোংরা আবর্জনা। এতে সুনামগঞ্জের পর্যটন ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

নদীর তীরের এই পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের ভোগান্তিও কম নয়। তেঘরিয়া-মড়লহাটি এলাকার বাসিন্দা মো. তাজউদ্দিন বলেন, নদীর পাড়ে কোথাও ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা নেই। পৌরসভার দেওয়া ড্রামগুলোও নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। দুর্গন্ধে চলাফেরাই কষ্টকর।

চাঁদনিঘাটের দোকানদার দুলন আহমদ বলেন, মানুষ নির্বিঘ্নে ময়লা ফেলে দেয়। কোথায় ফেলছে কি ধরনের ময়লা ফেলছে এসব দেখে না। অনেক সময় পলিথিন ব্যাগে পচনশীল খাবার ফেলে দেয়। পরে পাখি এসব খাবার খাওয়ার সময় পালিথিন ছিড়ে ফেলে তখন বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়ায় তখন আর দোকানে বসতেও পারি না, কারণ দুর্গন্ধে অসহ্য।

বড়পাড়া এলাকার বাসিন্দা হাফিজ ত্বাহা হুসাইন অভিযোগ করেন, আমরা পৌর কর দিই, কিন্তু পৌরসভার সকল সুবিধা আমরা পাই না। নদীর পাড় ছাড়া আর কোথাও ময়লা ফেলার জায়গা নেই। আমাদের এলাকা অনেক বড়। আর এতে ডাস্টবিনের পরিমান খুব নগণ্য। আমাদের এলাকায় প্রয়োজন অনুযায়ী ড্রেনেজ ব্যাবস্থা নেই, রাস্তায় পর্যাপ্ত আলো নেই, আমাদে জীবন অনেক কঠিন।

হাওর ও নদী রক্ষা আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ওবায়দুল হক মিলন বলেন, মানুষকে সচেতন করার কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। ড্রাম থাকলেও সেগুলো ময়লায় ভরে গেছে। শহরটা এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত। দায়িত্বশীলরা দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন, বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটিও নিষ্ক্রিয়।এই ময়লার স্তূপ শুধু নদীর সৌন্দর্য নষ্ট করছে না, বরং সুনামগঞ্জের মানুষের জীবনযাত্রা ও শহরের ভাবমূর্তিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। নদী ও খালের এই হৃদয়বেদনাময় দৃশ্য যেন সতর্কবার্তা, যে এখনই প্রয়োজন জনসচেতনতা ও প্রশাসনের পদক্ষেপ।

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক মো. মতিউর রহমান খান জানান, আমাদের সীমিত সক্ষমতা অনুযায়ী আমরা চেষ্টা করব নদীর পাড়ের ময়লা অপসারণে। জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। যেখানে ডাস্টবিনের অভাব, সেখানে দ্রুত স্থাপন করা হবে।আশা করি দ্রুত সমস্যাটি সমাধান হবে।